এই তো কদিন আগে
– সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
এই তো কদিন আগে,
তোমার আমার প্রথম দেখা,
মনে পড়ে? তুমি বলবে সে অনেক দিন,
আবছা স্মৃতি জাগে।
দুর, কোথায় অনেক দিন!
তুমি বড় ভুলো, সব কিছু যাও ভুলে।
তখন আমি উনিশ, ফ্রক ছেড়ে শাড়ি
প্লিটে সেফটীপিন।
লিপস্টিক নেলপলিশ,
রং মেলে না শাড়ির সাথে, ফ্ল্যাট হিলের স্কুল স্যু,
চুল বাঁধার লাল ফিতে, বিরক্তিকর,
আরও হাজার নালিশ।
স্কুলের গন্ডি পার,
ফর্ম তুলতে কলেজ গেটে লাইন, মনেতে ভয়,
হবে না কেন? সেই তো প্রথম একা,
নতুন চারিধার।
আজও নতুন লাগে,
তোমার রংচটা জিন্স, টি শার্ট আর
ঝাঁকড়া মাথার চুল, আমাদের প্রথম দেখা,
এইতো কদিন আগে।
মিলতো কেমন করে?
আমার কলেজ যাওয়া তোমার টাইপ স্কুলের ছুটি?
হয়তো তোমায় দেখে নিতাম আমার দু’চোখ ভরে।
নাম জানিনা যে,
কেমন করে বলবো কথা, যদিও ইচ্ছে হতো খুব।
মনে আমার ভাবনা কত, এমনি করে কথা
কোন মেয়ের কি আর সাজে!
রাগ হতো খুব,
এই ছেলেটা কি রে! দেখেও দেখেনা
তারপর সে একদিন কিছু না বলেই
হঠাৎ করে ডুব।
রোজই দু’চোখ খোঁজে,
আসোনা কেন আর, টাইপ শেখা শেষ?
চাকরী পেলে? জ্বর হয়েছে? ভাবি অনেক কিছু,
মনটা বোঝে না যে।
তারপর সে অনেক দিন,
কোথা দিয়ে পেড়িয়ে গেল কে জানে,
কলেজ শেষ, চাকরীর খোঁজ, ইন্টারভিউ,
জীবন বিরামহীন ।
হঠাৎ আবীর এলো।
সে তোমার মতো নয়, চলা বলায় ধোপদুরস্ত,
আধুনিকতার ছোঁয়া, আর তুমি, জিন্স টি শার্টে
কেমন এলোমেলো।
হাতটি তারই ধরে
পেড়িয়ে এলাম অনেকটা পথ এখন আমি ষাট।
ছেলেও আমার বড়, বিদেশে থাকে,
বিরাট চাকরি করে।
না জানি কোন কাজে
হঠাৎ সেদিন এসেছিলাম পুরোনো সেই পথে।
জানো, টাইপ স্কুলটা নেই, সেখানে এখন হাইরাইজ
সেজেছে নতুন সাজে।
প্রশ্ন জাগে মনে,
তুমিও কি দেখতে আমায় তেমনি চুরি করে?
সত্যি করে বলো, নাকি অন্য সুর বেজেছিলে
তোমার কানে- কানে?
আজও নতুন লাগে,
আমার চুলে রূপোর রেখা, চশমা বাইফোকাল,
তবুও নতুন আমার দেখা, টি শার্ট জিন্স, ঝাঁকড়া চুল
এই তো কদিন আগে।